Posted on Categories Healthcare Tips

হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কোলেস্টেরল, এখনই রুখে দিন

এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টরেল ধমনীতে প্লাক তৈরি করে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টরেল রক্ত থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টরেল সরিয়ে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

তেল-মশলা খেয়ে কোলেস্টেরল বাড়ছে? হার্ট নিয়ে চিন্তায় বুক ধড়ফড় করে? ভাল কোলেস্টেরলই বাঁচার উপায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। কী খেলে তৈরি হয় ভাল কোলেস্টেরল? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আধুনিক লাইফস্টাইলেই লুকিয়ে বিপদ। জাঙ্কফুডের রমরমা। তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে বিপদ। কম বয়সেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক। হার্টের সুস্থতা ও রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ধমনীর দেওয়ালে জমাট বেঁধে প্লাক তৈরি করে এবং রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। ফলে, দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। যেমন হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের নানা রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক।

সাধারণত দুধরনের কোলেস্টেরল আছে। একটি লো-ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন অর্থাত্‍ এলডিএল এবং অন্যটি হাই-ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন অর্থাত্‍ এইচডিএল। এলডিএল ধমনীর দেওয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে, তাই একে খারাপ কোলেস্টেরল বলে। আর এইচডিএল ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এলডিএল কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই একে ভাল কোলেস্টেরল বলে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কীভাবে কমানো যাবে এই ঝুঁকি?

বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান

যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়।কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া।

বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়।এছাড়াও তারা হোলগ্রেইন আটার রুটি এবং বাদামী চাল খাবারও পরামর্শ দিয়েছেন।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন

খাদ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও।চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।

তারা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে হলে স্যাচুরেটেড নয় এমন চর্বি (যেসব খাবারের উপর চর্বি জমাট বাঁধে না) সে ধরনের খাবার খেতে হবে।এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে, তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ন এবং ওয়ালনাট তেল দিয়ে রান্নার বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন।

দুধের বেলায় স্কিমড বা সেমি-স্কিমড (দুধ থেকে চর্বি সরিয়ে নেওয়া) দুধ খেতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে খাবারে যাতে বাইরে থেকে চিনি মেশানো না থাকে। লাল মাংসের বদলে খেতে হবে মুরগির মাংস। মুরগির চামড়া তুলে ফেলে দিন। গরুর মাংস খেলে তার উপর থেকে চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে।সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন মাছ খেতে হবে যাতে প্রচুর তেল আছে। বিস্কিটের বদলে নানা ধরনের বাদাম ও বীজ খেতে পারেন।

লবণকে বিদায় জানান

লবণ বেশি খেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে বৃদ্ধি পায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও।ব্রিটেনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয় যে এনএইচএস থেকে তাদের পরামর্শ হলো দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম (এক চা চামচের পরিমাণ) লবণ খাওয়া যেতে পারে। তারা বলছে, লবণ কম-বেশি খাওয়া একটি অভ্যাসের ব্যাপার। লবণ যতো কম খাওয়া হবে তার চাহিদাও ততো কমে যাবে। এই অভ্যাস বদলাতে মাত্র চার সপ্তাহের মতো সময় লাগে। এই সময় পর দেখা যাবে আপনি যে খাবারের সাথে লবণ খাচ্ছেন না, সেটি আপনি বুঝতেই পারবেন না।

খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণের পরিবর্তে মশলা দিয়ে খাবার প্রস্তুত করলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে।

ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবেন

রক্তে খারাপ কোলেস্টরেল এর মাত্রা কমাতে খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।

যেসব খাবারে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেশি থাকে সেগুলো আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।শুধু তাই নয়, এসব খাবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। হৃদরোগের যেসব কারণ আছে সেগুলো ঠেকাতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের মাধ্যমেই এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া সম্ভব।এসবের জন্যে ট্যাবলেটের উপর নির্ভর করতে হবে না। তবে তার মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিটামিন ডি।

কারো শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব থাকলে যেসব খাবার খাওয়া প্রয়োজন:

  • প্রতিদিন পাঁচটি ফল বা সবজি খাওয়া। ছোট্ট এক গ্লাস জুস। শিম ও ডাল জাতীয় শস্যও খেতে পারেন। বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে থাকে ভিটামিন ই।
  • মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ও হোলগ্রেইনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি। কলা, আলু এবং মাছে পটাশিয়াম।
  • ডাল ও হোলগ্রেইনে ম্যাগনেসিয়াম। দুগ্ধজাত খাবার ও সবুজ পাতার সবজি থেকে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম।

বেশি মোটা হলে ক্যালরি গ্রহণ কমিয়ে দিন

হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেওয়ার জন্য উপরের চারটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি অনেক দূর অগ্রসর হয়েছেন।কারণ আপনি যদি চিনি, লবণ, স্যাচুরেটেড চর্বিযুক্ত খাবার কম খান, ভিটামিন ও মিনারেল আছে এরকম খাবার বেশি খান তাহলে আবার মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম।

ওজন যাতে বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।মনে রাখতে হবে মোটা হলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে কোমরে চর্বি জমা হলে।পুরুষের কোমর যদি ৩৭ ইঞ্চি আর নারীর কোমর ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চির বেশি হয় তাহলে ওজন কমাতে হবে। ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

আরো যেসব উপায়:

  • প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমান।
  • সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।
  • মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন।
  • ধূমপান ছেড়ে দিন।

বর্তমানে আমাদের দেশে উচ্চ কোলেস্টেরল জনিত হার্টের অসুখে আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। উপরের নিয়মগুলি মেনে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে আমরা সহজেই এই সমস্ত রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

ডাঃ মাজিদ মাহমুদ

এম বি বি এস, সি সি ডি (বারডেম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *