Posted on Categories স্বাস্থ্যসেবা টিপস

ডেঙ্গুঃ এখনও সতর্কতা প্রয়োজন।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে এখনও সতর্কতা প্রয়োজন।

গত কয়েক বছর ধরে আরও একটি ভাইরাসজনিত মহামারী রোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এটি হলো ডেঙ্গুজর। গত শতাব্দীতেও এ অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। মাঝের বছরগুলোতে এ রোগটি খুব একটা দেখা যায়নি। জনসচেতনতা কিছুটা বৃদ্ধি পাবার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। তবে গতবছর আবার নতুন করে এর আক্রমণে বেশকিছু মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের ভাইরাসটির বাহক হলো একটি মশা। প্রধানত এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের দেহ থেকে জীবাণু নিয়ে তার কামড়ের মাধ্যমের অন্য সুস্থ (আপাত) মানুষকে সংক্রমিত করে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিউলেক্স মশাও ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। তবে প্রধান বাহক এডিস মশাটি দিনের বেলাতেই শুধু মানুষকে কামড়ায় এবং ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটায়। এডিস মশার আরও স্বাতন্ত্র্য হলো এরা আবদ্ধ ছোট ছোট জলাধারে বংশবৃদ্ধি করে। শহরাঞ্চল এদের খুব প্রিয়। শহরে বাসাবাড়ির ফুলের টবে, ফুলদানিতে, ফ্রিজে বা এয়ার কন্ডিশনারের ট্রে বা কোন কৌটা বা ডাবের খোসার জমা জলে এরা ডিম পারে এবং এ ডিম থেকে পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে ওঠে।

ফুলের টবে বা ফুলদানিতে, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের ট্রে অথবা কোন কৌটা বা ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা কাউকে কামড়ানোর এক সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :

  • উচ্চতাপমাত্রা (১০৪ ফাঃ বা তারও বেশি)
  • মাথাব্যথা
  • চোখের পেছন দিকে ব্যথা
  • মাংস পেশিতে ব্যথা ও হাড়ে তীব্র ব্যথা।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে - উচ্চতাপমাত্রা, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও হাড়ে তীব্র ব্যথা।

এসব কয়েক দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যেতে পারে। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরের জটিলতা সাধারণত জ্বর ছাড়ার পরই শুরু হয়। তাই জ্বর ছেড়ে যাবার পরও কমপক্ষে তিনদিন রোগীকে বিশ্রামে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু যতি ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণযুক্ত ডেঙ্গুজ্বর হয়, তবে উপরের বর্নিত লক্ষণগুলোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেমন- ত্বকের নিচে, মাড়ি দিয়ে, নাক দিয়ে এবং বমি বা পায়খানার সঙ্গে। রক্তপাত বেশি হলে বা অন্য কোন বিশেষ প্রয়োজনে রোগীর শিরায় স্যালাইন দেয়া হয়। কারও কারও রক্তের প্লাটিলেটও দেয়া হয়। ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু হার খুব বেশি না হলেও ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভাবে কারও কারও মৃত্যুবরণ করার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই এদের বেলায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে রোগীকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করলেও চলে। রোগীর শারীরিক সমস্যা বিবেচনা করে চিকিৎসা দিলেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে থাকবে। তবে ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বা কোন জটিলতা দেখা দিলে কোনরূপ ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে ত্বরিত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া সহজ হয়। বাড়িতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু জিনিস খুব ভাল করে মনে রাখতে হবে।

  • ডেঙ্গুজ্বরে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই শুধুমাত্র ব্যবহার করা যাবে।
  • ডেঙ্গজ্বরের রোগীকে সবসময় মশারির নিচে থাকতে, অন্যথায় তার দেহ থেকে জীবাণু মশাবাহিত হয়ে অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে পারে।
  • ডেঙ্গুজ্বরের রোগী সব ধরনের খাবারই খেতে পারবে। তবে জলীয় খাদ্য বেশি খেতে হবে।

একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, আমাদের চারপাশের সুস্থ সবল মানুষদের মাঝে অনেকেই হয়ত কোন এক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা আবার স্বাভাবিকভাবেই সেরেও উঠেছেন। রক্তের পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়। পৃথিবীর অনেক দেশে ডেঙ্গু হতে দেখা যায়। প্রধানত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও বছরের অন্যান্য সময়ও ডেঙ্গু হতে পারে। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের তথ্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তাই ডেঙ্গুর হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সবচেয়ে ভাল পন্থা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপ হতে পারে :

  • আক্রান্ত রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া।
  • রোগীর জ্বর সারার পরও কমপক্ষে তিন দিন মশারির ভেতরে রাখা।
  • ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা নির্মুল ও এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে বাসাবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর ফুলের টব, ফুলদানি ও ফ্রিজের ট্রেতে জমা পানি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করতে হবে।
  • সর্বোপরি ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

ডাঃ মাজিদ মাহমুদ

এমবিবিএস, সিসিডি (বারডেম)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।